বাড়িতে বসেই ৭ দিনের মধ্যে ওজন কমান ৩ টি সহজ উপায়ে।
অনেক ডায়েট প্ল্যানগুলি আপনাকে ক্ষুধার্ত বা অসন্তুষ্ট বোধ করতে পারে। এই কারণেই সেই সব ডায়েট প্ল্যানগুলি দীর্ঘদিন ধরে ফলো করা আপনাদের পক্ষ্যে খুব কঠিন হয়ে ওঠে।
যাইহোক, কিছু কিছু ডায়েট প্ল্যান আছে যেগুলি ফলো করাও যেমন সহজ তেমনি কার্যকরও। কম কার্ব (Carbohydrate) যুক্ত ডায়েট এবং পুরো খাবার(whole food), কম ক্যালোরি যুক্ত ডায়েট, ওজন হ্রাসের জন্য কার্যকর এবং অন্যান্য ডায়েটের তুলনায় এটি ফলো করা সহজ।
এখানে ওজন কমানোর কিছু উপায় রয়েছে যা কোনোরকম সাইড এফেক্টস (side effects) ছাড়াই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে :-
- আপনার ক্ষুধা হ্রাস করুন বা কম করে খাদ্য গ্রহণ করুন
- একই সময়ে আপনার বিপাকীয় স্বাস্থ্যের(metabolic health) উন্নতি করুন
আরো পড়ুন - ওজন কমাতে কত দিন সময় লাগে? কত দিনে আপনি আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন? ওজন কমাতে কি করতে হবে ?
১. পরিশোধিত কার্বস(refined carbs) খাওয়া বন্ধ করুন
দ্রুত ওজন কমানোর একটি উপায় হল শর্করা এবং স্টার্চ বা কার্বোহাইড্রেট গুলি খাবারের তালিকা থেকে ছেটে ফেলা। কম কার্ব খাওয়ার ডায়েট প্ল্যান বা পরিশোধিত কার্বস-এর পরিবর্তে পুরো বা অপরিদশোধিত শস্য(whole grains) গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আপনি শর্করা বা স্টার্চ জাতীয় খাবারের গ্রহণ (consumption) কমাতে পারেন।
যখন আপনি আপনার খাদ্যতালিকায় এই পরিবর্তনটি করেন, তখন আপনার ক্ষুধার মাত্রা কমে যায়, এবং আপনি সাধারণত কম ক্যালোরি খাওয়া শুরু করেন।
একটি কম কার্ব যুক্ত ডায়েট প্ল্যান ফলো করতে থাকলে আপনার শরীর বাধ্য হবে আপনার শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি পুড়িয়ে তা থেকে শক্তি অর্জন করতে।
আপনি যদি ক্যালোরি ঘাটতির সাথে পুরো শস্যের(whole grains) মতো আরও জটিল কার্বস খেতে পছন্দ করেন তাহলে ইটা থেকে আপনি উচ্চতর ফাইবার পাবেন যা থেকে উপকৃত হবেন। এই ফিবারগুলি হজমহতে অনেক সময় নেয়, এতেকরে দীর্ঘক্ষনের জন্য আপনার পেট ভর্তি থাকবে।
২০২০ সালের একটি গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে বয়স্ক লোকেদের ওজন কমানোর জন্য খুব কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েট সবথেকে বেশি উপকারী। গবেষণাটি থেকে আরও জানা যায় যে, কম কার্ব যুক্ত ডায়েট ক্ষুধা হ্রাস করতে পারে যা আপনাকে দৈনিক কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে বাধ্য করে যার ফলে আপনার দ্রুত ওজন হ্রাস হয়।
সারাংশ
আপনার ডায়েট থেকে শর্করা এবং স্টার্চ বা কার্বস হ্রাস করা আপনার ক্ষুধা দমন করতে, আপনার ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস করতে এবং আপনাকে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
২. প্রোটিন, চর্বি, এবং শাকসবজি খান
আপনার প্রতিটি খাবারের মধ্যে এগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত:
- একটি প্রোটিন উৎস
- চর্বি
- শাক
- জটিল কার্বোহাইড্রেটের একটি ছোট অংশ, যেমন পুরো শস্য(whole grain)
আপনি কীভাবে আপনার খাবার তালিকা তৈরী করতে পারেন তা দেখে নিন :-
- কম কার্ব যুক্ত ডায়েট প্ল্যান (বিস্তারিত পড়ুন)
- কম ক্যালোরি যুক্ত ডায়েট প্ল্যান (বিস্তারিত পড়ুন)
(ক) প্রোটিন
ওজন কমানোর সময় আপনার স্বাস্থ্য এবং পেশী-ভর সংরক্ষণে সহায়তা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া অপরিহার্য।
বিভিন্ন গবেষণাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকির কারণগুলি দূরে রাখতে পারে এবং ক্ষুধা ও শরীরের ওজন উন্নত করতে পারে।
আপনার সুস্বাস্থের জন্য কতটা প্রোটিন খাওয়া দরকার তা কীভাবে নির্ধারণ করা যায় সেটা এখানে দেওয়া হল। অনেক কারণ আপনার প্রোটিনের চাহিদা নির্ধারণ করে, কিন্তু সাধারণত :-
- গড় পুরুষের জন্য প্রতিদিন ৫৬-৯১ গ্রাম
- গড় মহিলার জন্য প্রতিদিন ৪৬-৭৫ গ্রাম
আরো পড়ুন - রিসেলিং বলতে কী বোঝায় ? রিসেলিং আসল না নকল ? কিভাবে একটি রিসেলিং বা পুনর্বিক্রয় ব্যবসা শুরু করা যায় ? রিসেলিং এপ্স গুলি কি কি ? জেনে নিন সব বিস্তারিত তথ্য।
পর্যাপ্ত প্রোটিন যুক্ত ডায়েটগুলিও সাহায্য করতে পারে :-
- খাদ্য সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা এবং অবসেসিভ চিন্তা ৬০% কম করে দেয়।
- গভীর রাতে জলখাবারের ইচ্ছা অর্ধেক কমিয়ে দেয়।
- আপনাকে ভরা পেটের অনুভূতি দেয়।
স্বাস্থ্যকর প্রোটিন উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে :-
মাংস: গরুর বা ছাগলের মাংস, মুরগি, শুয়োরের মাংস এবং মেষশাবক এর মাংস
মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার: স্যালমন মাছ(salmon), ট্রাউট(trout), এবং চিংড়ি
ডিম: কুসুম সমেত পুরো ডিম
উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন: মটরশুটি, শিম, কুইনোয়া(quinoa), টেম্পেহ(tempeh) এবং টোফু(tofu)
(খ) কম কার্ব এবং অধিক শাকসবজি
আপনার প্লেটটি শাকসবজি দিয়ে লোড বা ভর্তি করতে ভয় পাবেন না। এগুলি পুষ্টিতে পরিপূর্ণ, এবং আপনি ক্যালোরি এবং কার্বস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি না করে শাকসবজি খুব বড় পরিমাণে খেতে পারেন।
কম কার্ব বা কম ক্যালোরি যুক্ত ডায়েট প্ল্যানের জন্য যে শাকসবজি গুলি আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন:-
- ব্রকোলি
- ফুলকপি
- পালং শাক
- টমেটো
- বাঁধাকপি
- সুইস চার্ড
- লেটুস
- শসা
(গ) স্বাস্থ্যকর চর্বি
চর্বি খেতে ভয় পাবেন না।
আপনি যে ডায়েট প্ল্যানই ফলো করুন না কেন আপনার শরীরের সবসময়ই স্বাস্থ্যকর চর্বি প্রয়োজন। অলিভ অয়েল এবং অ্যাভোকাডো তেল আপনার ডায়েট প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করে এই চাহিদা পুরোজ করতে পারেন।
অন্যান্য চর্বি যেমন মাখন এবং নারকেল তেলকে এদের উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট উপাদানের কারণে পরিমিত পরিমানে ব্যবহার করা উচিত।
৩. শরীরচর্চা করুন
ব্যায়াম, আপনাকে আরও দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ওয়েইট লিফটিং(Lifting weights)-এর একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ওয়েইট লিফটিং(Lifting weights) করে আপনি প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করবেন এবং আপনার বিপাকক্রিয়াকে ধীর হওয়া থেকে রোধ করবেন, যা আপনার ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বরান্বিত করবে।
ওয়েইট লিফটিং(Lifting weights)-একে জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে তিন থেকে চার দিন জিমে (gym) যাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি যদি জিমে (gym) নতুন হন তবে একজন প্রশিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
যদি ওজন উত্তোলন আপনার জন্য একটি বিকল্প না হয়, তবে কিছু কার্ডিও ওয়ার্ক-আউট (cardio workouts) যেমন হাঁটা, জগিং(jogging), দৌড়ানো, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটা ওজন হ্রাস এবং সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।
কার্ডিও এবং ওয়েইট লিফটিং উভয়ই ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
ওজন কমানোর ৯টি টিপস :--
দ্রুত ওজন কমানোর জন্য এখানে আরও ৯টি টিপস দেওয়া হল ---
১. একটি উচ্চ প্রোটিন প্রাতঃরাশ (breakfast) খান। একটি উচ্চ প্রোটিন যুক্ত প্রাতঃরাশ (breakfast) খেলে খিদে কম পায় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের সম্ভাবনা কম থাকে।
২. মিষ্টি পানীয় (sugary drinks) এবং ফলের রস এড়িয়ে চলুন। চিনি বা চিনি-জাতীয় মিষ্টি খাবার থেকে পাওয়া ক্যালোরি আপনার শরীরের জন্য উপযোগী নয় এবং এটি ওজন হ্রাসকে বাধা গ্রস্ত করতে পারে।
৩. খাবারের আগে জল পান করুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে খাবারের আগে জল পান করা ক্যালোরি গ্রহণ হ্রাস করে এবং ওজন পরিচালনায় কার্যকর হতে পারে। খাওয়ার আগে ১-২ গ্লাস জল খেলে ভর্তি হয়ে থাকে যার ফলে আপনি অপেক্ষাকৃত কম খাদ্য গ্রহণ করবেন এবং গৃহীত ক্যালোরির পরিমাণও কম হয়।
৪. ওজন কমানোর-বান্ধব (weight-loss-friendly) খাবার গুলি গ্রহণ করুন। কিছু খাবার আছে যেগুলি অন্যদের তুলনায় বেশি দ্রুত ওজন কমাতে পারে। যেমন - গোটা ডিম (Whole Egg), সবুজ শাক-সবজি, স্যামন মাছ (Salmon), মিষ্টি আলু (sweet potato) ইত্যাদি।
৫. দ্রবণীয় ফাইবার(soluble fiber) খান। গবেষণায় দেখা গেছে যে দ্রবণীয় ফাইবার (soluble fiber) যুক্ত খাবার ওজন হ্রাসকে উৎসাহিত করতে পারে। গ্লুকোকান্নান(Glucomannan)-এর মতো ফাইবার সম্পূরকগুলিও ওজন হ্রাসে সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুন - ব্রণ দূর করার সহজ উপায় - Pimples
৬. কফি বা চা পান করুন। ক্যাফিন সেবন আপনার বিপাকক্রিয়াকে বাড়াতে পারে।
৭. পুরো খাবারের (whole foods) উপর আপনার ডায়েট বেস করুন। এগুলি স্বাস্থ্যকর, বেশি ভরাট, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের চেয়ে কম মক্যালোরি সম্পন্ন হয়।
৮. ধীরে ধীরে খান। দ্রুত, ঠিক মতো না চিবিয়ে খাওয়া সময়ের সাথে সাথে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে, যেখানে, ধীরে ধীরে ভালো করে খাবার চিবিয়ে খাওয়া আপনাকে আরও পূর্ণ (ভরা পেট) বোধ করায় এবং ওজন হ্রাসকারী হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।
৯. ভাল মানের ঘুম। ঘুম অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ, এবং অপর্যাপ্ত ঘুম ওজন বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে একটি।